ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে কেন সমাধান সম্ভব নয়, নিজেরা বাঁধ দিলে কী হবে?

 

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং নদীগুলোর প্রবাহের কারণে বন্যা একটি সাধারণ ও পুনরাবৃত্ত সমস্যায় পরিণত হয়েছে। দেশটির নদীগুলোর অধিকাংশই ভারত এবং মিয়ানমার থেকে উৎপন্ন, এবং এই নদীগুলোর পানি অবশেষে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মেশে। এর ফলে, দেশের ভেতরে প্রবাহিত পানির প্রায় ৯২ শতাংশ আসে দেশের বাইরের বৃষ্টিপাত থেকে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য বিশেষ করে বন্যা মৌসুমে চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।


ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীগুলোর সংখ্যা প্রায় ৫৪টি এবং এসব নদীর ওপর অনেকগুলো বাঁধ দিয়ে ভারত পানি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এর ফলে, বর্ষাকালে বন্যার এবং শুষ্ক মৌসুমে খরা ও লবণাক্ততার সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে দেশের একটি বড় অংশ।


এ অবস্থায়, বাংলাদেশে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পানি অবকাঠামো তৈরি করে কি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব? এ বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং আইনের বিষয়গুলোও গুরুত্বপূর্ণ।


১৯৯৭ সালে জাতিসংঘে প্রণীত ‘দ্য কনভেনশন অন দ্য ল অব নন-নেভিগেশনাল ইউজেস অব ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটারকোর্স’ আইনটি একটি আন্তর্জাতিক নীতিতে পরিণত হয়েছে, তবে বাংলাদেশ এখনো এই আইনে স্বাক্ষর করেনি। স্বাক্ষর করলে অন্তত আন্তর্জাতিক আদালতে আরজি পেশ করা যেত, যদিও ভারতের সমর্থন ছাড়া এটি বাস্তবায়ন কঠিন। তাছাড়া, দ্বিপক্ষীয় চুক্তি এবং যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও করা হয়েছে, কিন্তু সফলতা তেমন মেলেনি।


আসলে, ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিবেশীর সঙ্গে পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সহজ নয়। তবে দেশের ভেতরে স্থাপনা নির্মাণ করে পানি ধরে রাখার প্রয়াস করা যেতে পারে। বাঁধ, ব্যারাজ, এবং এমব্যাংকমেন্টের মাধ্যমে পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে, তবে এর জন্য সঠিক প্রযুক্তি এবং পরিকল্পনার প্রয়োজন।


অতীতে জিয়াউর রহমানের ‘খাল খনন কর্মসূচি’ অনেকটাই সফল ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তা অবহেলিত হয়েছে। বর্ষাকালে পানি ধরে রাখার মাধ্যমে এবং শুষ্ক মৌসুমে তার ব্যবহার নিশ্চিত করে খরা এবং বন্যা দুটোরই সমাধান করা সম্ভব। 


বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সরকারের কাছে কিছু দাবি উত্থাপন করা যেতে পারে, যেমন:


1. আন্তর্জাতিক নদী আইনটি স্বাক্ষর করা এবং প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া।

2. যৌথ নদী কমিশনে নেপাল, ভুটান, ও চীনকে সংযুক্ত করা।

3. গঙ্গা ও তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

4. সুরমা, কুশিয়ারা, এবং পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর উজানে ড্যাম নির্মাণের সম্ভাবনা যাচাই করা।

5. স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন এবং ড্রেজিং কার্যক্রম বাড়ানো।


নদীমাতৃক বাংলাদেশের জন্য পানি সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

Argitaratu iruzkina

0 Iruzkinak