গত কিছু দিনে বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা অভূতপূর্ব ও নজিরবিহীন। ২০২৪ সালের মধ্য জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে কারফিউ দিতে হয়, সেনাসদস্যদের নামাতে হয় এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করতে হয়।
প্রথম আলোর সর্বশেষ তথ্যমতে, এই আন্দোলনে ২০৯ জন মারা গেছেন এবং কয়েক হাজার আহত হয়েছেন। অনেকেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, কেউবা অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু হয়েছেন। শিক্ষার্থী ও তরুণরা এই আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশু-কিশোরেরাও ছিল। এই ঘটনার ফলে অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে, শিশুরা বাবা হারিয়েছে, বোনেরা তাঁদের ভাইদের হারিয়েছে, এবং কিশোর-তরুণদের সামনে থেকে তাঁদের বন্ধুরা মারা গেছেন।
এই আন্দোলন কেবল কোটা সংস্কার দাবির জন্য নয়, এটি পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। বর্তমান প্রজন্ম, যারা ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ধ্যানধারণা ও যোগাযোগে সর্বজনীন এবং প্রবলভাবে আত্মমর্যাদাবান ও প্রতিষ্ঠানবিরোধী, তারা এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৮ সালের আগস্টে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে ২০২৪ সালের জুলাইতে, তবে অনেক বেশি জোরালোভাবে।
এই সহিংসতার মধ্যে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক কিছু ঘটনার মধ্যে ছিল মিরপুরের ১১ বছরের শিশু সাফকাত সামির, নারায়ণগঞ্জের সাড়ে ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপ এবং ঢাকার মাইলস্টোন কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাইমা সুলতানার মৃত্যু। এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে সহিংসতা কেবল মিছিল ও বিক্ষোভকারীদের নয়, সাধারণ মানুষের জীবনেও বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের বেপরোয়া হামলার খবর, ছবি ও ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংহতি তৈরি হয়। মাসখানেক আগে জন্ম নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে এবং প্রতিবাদে শামিল হয়।
এই আন্দোলনের তৃতীয় এবং সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট ছিল রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু। রাস্তার মাঝে একা দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা আবু সাঈদের বুকে রাবার বুলেট লাগার ছবিটি নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের শক্তিশালী প্রতীক হয়ে থাকবে। আবু সাঈদের মৃত্যু সারা দেশের মানুষের মধ্যে অভূতপূর্ব এক সংহতি গড়ে দেয়।
এই ঘটনাগুলো দেশের জনগণের মধ্যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ এবং অব্যবস্থাপনার প্রমাণ। সরকারকে অবশ্যই এই পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
0 Iruzkinak